বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৮:৪০ অপরাহ্ন

হুশিয়ারির পরও বিতর্কিতদের নাম কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে তৃণমূল

হুশিয়ারির পরও বিতর্কিতদের নাম কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে তৃণমূল

স্বদেশ ডেস্ক:

স্থানীয় নির্বাচনে (উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ) প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের নাম কেন্দ্রে না পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে দফায় দফায় হুশিয়ারিও দেওয়া হয়। তবে তাতে কর্ণপাত করেনি তৃণমূল। দেশের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক বিতর্কিত মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এমন তালিকা পাঠানোয় বাদ পড়েছে ত্যাগী, দুর্দিনের পরীক্ষিত নেতাদের নাম। জেলা ও উপজেলা নেতাদের এমন ‘অবিবেচক’ কর্মকাণ্ডের জন্য শিগগিরই দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, অনিয়ম করে যারা প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন বা পাঠাবেন তাদের বিরুদ্ধে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রমাণ পাওয়া মাত্রই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জড়িত’ এবং ‘নারী নির্যাতন মামলা’র আসামির নামও কেন্দ্রে পাঠিয়েছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা থেকে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম। তার বিরুদ্ধে হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও যুবলীগ নেতার বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে দুটি মামলাও করা হয়। মামলা নং : জিআর-২৮৯/২১ অপর মামলা নং- জি.আর-২৮৮/২১। এ অবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদে মনোনয়ন না দিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। দলের সভাপতি বরাবর ভুক্তভোগী পুলক লিখেন, ‘চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম একজন সাম্প্রদায়িক মানুষ।

তার অত্যাচার নির্যাতনের কারণে ৬নং রাজগঞ্জ ইউনিয়নের সংখ্যালঘু পরিবার/ব্যক্তিবর্গ নিরাপদ নয় এবং প্রতিনিয়ত আতঙ্কে জীবনযাপন করতে হয়। বিগত পাঁচ বছরে এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিভিন্ন হামলা, মামলা, অনিয়ম, অকল্পনীয় দুর্নীতি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে এলাকা ছেড়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিম আমাদের সময়কে বলেন, আমার জানামতে সে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আপনাদের কাছে যেসব অভিযোগ গেছে আমার ধারণা তা পুরোপুরি সত্য নয়।

দলের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে পাঠানো আরেক অভিযোগপত্রে দেখা যায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার ৩নং কুশমাইল ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থী তালিকায় বাদ পড়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল জব্বারের নাম। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি কেন্দ্রে চিঠি পাঠিয়েছেন। এতে তার প্রায় অর্ধশত বছরের রাজনৈতিক ত্যাগ ও বিরোধী দলে থাকাকালীন কারাবরণের কথা লিখেছেন।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম। আওয়ামী লীগ নেতা শরবত আলী মোল্যা হত্যা মামলার প্রধান আসামি তিনি। তিনি একই ইউনিয়ন থেকে আবার মনোনয়ন চান। তার পিতা মৃত মোজাহার সরদার গদাইপুর গ্রামের রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামি বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বড় ভাই মৃত আ ম আবদুল আলীম সরদার আশাশুনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন। তার মেজ ভাই জুলফিকার আলী জুলি আশাশুনি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক, সেজ ভাই আবদুস সালাম বাচ্চু উপজেলা বিএনপির সদস্য। এ ছাড়া ডালিমের ছোট ভাই টগর উপজেলা বিএনপির সক্রিয় কর্মী।

জানতে জাইলে খাজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল কুদ্দুস মোল্লা বলেন, শাহনেওয়াজ ডালিমের বিরুদ্ধে শরবত আলী হত্যা মামলাসহ প্রায় ২০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি মামলার চার্জশিটও হয়ে গেছে।

পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল হাকিম হাওলাদারের স্বাক্ষর জাল করে কেন্দ্রে তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তালিকায় জেলা সভাপতি একেএম আবদুল আউয়ালের স্বাক্ষর রয়েছে। সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর জাল করার বিষয়টি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকসহ বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অবহিত করা হয়েছে। জেলা সভাপতি একেএম আউয়ালের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা অনেক যাছাই-বাছাই করে দলীয় মনোনয়ন দিচ্ছি। এর পরও যদি কোথাও কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তা খতিয়ে দেখা হবে।’

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সই করা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশনা ছিল। পরিচ্ছন্ন, ত্যাগী ও তুলনামূলকভাবে জনপ্রিয় নেতাদের নাম যুক্ত করে এ তালিকা পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্র। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তৃণমূল থেকে পাঠানো প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের নির্দেশনা ছিল। পরে তৃণমূল নেতাদের রেজুলেশন পাঠানোর ক্ষেত্রে বিলম্বসহ নিজস্ব লোকদের নাম রেজুলেশনে অন্তর্ভুক্ত করে পাঠানোর বিভিন্ন অভিযোগ আসায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের ক্ষেত্রে সবার জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন দলটি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877